সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি,
দেশে ভয়াবহ করোনাভাইরাস কাল চলছে। সচেতন মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারপরও সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি থেমে নেই। এবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুষ্টিকর পথ্য প্রদানে ভাগ বসানোর অভিযোগ উঠেছে। সরকার বরাদ্দকৃত অর্থের শতকরা ৪০ ভাগ টাকা লোপাটের অভিযোগ ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই কর্মকর্তার নাম ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল ছিল পুষ্টি সপ্তাহ। আর এই পুষ্টি সপ্তাহ পালনে সরকার বরাদ্দ দেয় এক লাখ টাকা। পুষ্টি সপ্তাহ পালন করা বিষয়ে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসারের সঙ্গে। তিনি বলেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পুষ্টি সপ্তাহের কর্মসূচি ছ্টো করা হয়। শুধুমাত্র গরীব প্রসূতি ৮০ জন মাকে দেয়া হয় পুষ্টিকর পথ্য। এসব পথ্যের মধ্যে ছিল চাল ১০ কেজি, তেল হাফ লিটার, লবণ হাফ কেজি, মসুর ডাল এক কেজি, মিষ্টি কুমড়া একটি, লাউ একটি, আলু দুই কেজি, টমেটো এক কেজি ও শষা এক কেজি। এজন্য প্রতিজন মাকে দেয়া প্রতিটি প্যাকেটে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮০৫ টাকা।
এছাড়াও পুষ্টি সপ্তাহ পালন কমিটির সভার জন্য এক হাজার ৩০০ টাকা, প্রতি প্যাকেটের বস্তার মূল্য ১৫ টাকা, পলিথিন ও ভ্যান ভাড়া ৯০০ টাকা, লেবার খরচ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে এক হাজার ৩০০ টাকা, ১৫ বর্গফুট আয়তনের দুটি ব্যানার বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা। অথচ ছাপাখানার মালিকরা বলছেন এই আয়তনের ২টি ব্যানার তৈরীতে খরচ পড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। একই সঙ্গে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে হামিউস সুন্নাহ ফয়জুল উলুম ক্বওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ২৪ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরের খাবারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান। অথচ ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে দুঃস্থ গর্ভবতী মাদের দেয়া খাদ্য সামগ্রীর মূল্য বিষয়ে যাচাই করতে গিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। আর তাহলো পাইকারী বাজারের চলতি মূল্যের চেয়ে প্রতিটি পণ্যের মূল্য শতকরা ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দেখানো হয়েছে। পাইকারী বাজারের মূল্য হিসাবে প্রতিটি খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেটে ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রতিটি প্যাকেটে ব্যয়ে দেখানো হয়েছে ৮০৫ টাকা। সেই হিসাবে বাড়তি ব্যয় দেখানো হয়েছে প্যাকেট প্রতি ১৫৫ টাকা। এ হিসাব মতে ৮০ প্যাকেটে অর্থ লোপাট করা হয়েছে ১২ হাজার ৪০০ টাকা। ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে পুষ্টি সপ্তাহ পালনে তাদের সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ৭২ হাজার ৯০০ টাকা। সরকারি বরাদ্দ ৮৫ হাজার টাকা। তার হিসাব মতেই পকেটে স্থিতির পরিমাণ ১৩ হাজার ১০০ টাকা। তবে সরকারের প্রকৃত বরাদ্দ এক লাখ টাকা হলে অনিয়ম করা হয়েছে সবমিলে ৪০ হাজার টাকারও বেশি।
পুষ্টি সপ্তাহ পালনের সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের শতকরা ৪০ ভাগ টাকা আত্মসাৎ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশারের সঙ্গে। তিনি অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন বেচে যাওয়া অর্থ ভ্যাট পরিশোধ বাবদ রাখা হয়েছে।
পুষ্টি সপ্তাহ পালন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদের সঙ্গে অনিয়ম বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পুষ্টি সপ্তাহ পালন কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, কাউকে অনিয়ম করার সুযোগ দেয়া হবে না। নীলফামারী জেলা সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মন পুষ্টি সপ্তাহ পালনে ব্যয়িত অর্থের অনিয়ম বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন এখন আমরা করোনা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি, ২০/২৫ হাজার টাকা নিয়ে কথা বলতে চাইছি না।